শেরপুর প্রতিনিধি: শেরপুর জেলা সদর উপজেলার বাজিতখিলা ইউনিয়নের সুলতানপুর এবং ওই গ্রাম লাগোয়া পাশ্ববর্তী শ্রিবরদী উপজেলার কারারপাড় গ্রাম দুটিতে অবৈধ ভাবে জিহান অটো ব্রিক ফিল্ডের ধোঁয়া ও সৃষ্ট গ্যাসে প্রায় ৮০ একর বোরো ধানের ক্ষেত সম্পুর্ণ নষ্ট হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। চলতি বরো মৌসুমের ফসল কৃষকরা তাদের ঘরে তুলতে পারবে না বিধায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ফলে উল্লেখিত গ্রামের ১৩০ জন কৃষকের স্বপ্ন পুঁড়ে গেছে।
১৭ এপ্রিল রোববার সকালে ওই দুটি গ্রামে সরেজমিনে দেখে গেছে, শেরপুর সদর উপজেলার সুলতানপুর ও কারারপাড়া গ্রামে এখন কৃষদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। সহায় সম্বল খরচ করে রাত-দিন পরিশ্রম করে বোরো আবাদ করে ফসল ঘরে তোলার সপ্ন দেখছিলো ঠিক এ সময়ই বিনা মেঘে বজ্রপাত পড়েছে তাদের মাথায়। পাশ্ববর্তী অবৈধ ইটভাটার ধোয়া, গরম বাতাস ও গ্যাসের কারণে আশাপাশের ফসলি ধানের জমি পুড়ে গেছে। বিস্তৃর্ণ সবুজ ধান ক্ষেত এখন মড়া ক্ষেতে পরিনত হয়েছে। গাছের পাতা শুকিয়ে গেছে, ধানগুলো হয়েছে চিটা। এছাড়া আশাপাশের বাঁশঝাড়, মেহগনি বাগানসহ বিভিন্ন ফলদ ও বনজ গাছ বিবর্ণ হয়ে গেছে। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছে স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা। তারা এখন হা-হুতাস করছেন আর কান্নাকাটি করছে এর ক্ষতিপুরণের জন্য।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের মধ্যে মনসুর, কালাম, আক্কাস, আমজাদ,ওয়াহাব, হাবি, শাহজাহান, কবির, রেহানা, মান্নান ও সোহাগসহ শতাধিক কৃষক জানান, বিগত ছয় বছর যাবৎ প্রভাশালী শিল্পপতি মরহুম ইদ্রিস মিয়া এ ভাটাটি গড়ে তুলে। যে ভাটার নেই কোন লাইসেন্স, নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। তারপরও পরিবেশ অধিদপ্তরের নাকের ডগায় চলছে অবৈধ ভাবে ইট পোড়ানো। কোন নিয়ম-নীতি না ইট পোঁড়ানোর কাজও করে যাচ্ছে। স্থানীয়রা বিভিন্ন সময়ে ওই অবৈধ ইটভাটার বিষয়ে অভিযোগ দেয়ার পরও কিছুই হয়নি।
ওই প্রভাবশালী শিল্পপতির অবৈধ ইট ভাটা কীভাবে চালিয়ে যাচ্ছে তা তাদের বোধগম্য নয় বলে জানায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাসান খুররম। তিনি জানায়, জানালেন ভাটার মালিক প্রভাবশালী এই শিল্পপতির কাছে এলাবাসী জিম্মি হয়ে জীবন কাটাচ্ছে, তবে এবারের ধানের ক্ষতি এলাকার কৃষকদের পথে বসিয়েছে।
সদর উপজেলার বাজিতখিলা ইউনিয়ন ব্লকের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার মো. লুৎফর রহমান ফসলের মাঠ পরিদর্শন শেষে অবৈধ ভাটার ধোয়াঁয় সৃষ্ট গ্যাসে ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে সত্যতা স্বীকার করেন।
এ বিষয়ে জিহান অটো ব্রিকস এর ম্যানেজার মো. মোশারফ হোসেন তাদের ইট ভাটা বৈধ বলে দাবী করে জানায়, ভাটার আগুনের কারণে ক্ষেতের এমনটা হয়েছে এটা কাল্পনিক। নিয়ম মেনেই আগুন সাট ডাউন দেয়া হয়।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক নয়ন কুমার রায় পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়পত্র ছাড়া ভাটা চলার কথা স্বীকার করে জেলা প্রশাসনের উপড় দোষ চাপিয়ে তিনি বলেন, আগুন দেয়ার লাইসেন্স দেয়ার দায়িত্ব জেলা প্রশাসকের এবং মোবাই কোর্ট পরিচালনাসহ সকল দেখভাল জেলা প্রশাসকই করে থাকেন। বিষয়টি তিনিই ভালো বলতে পারবেন।
এবিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক ড. মুহিত কুমার দে জানায়, সরেজমিনে দেখে দেখা গেছে আশপাশের ইটভাপার আশপাশে বেশ কিছু জমির ধান চিটা হয়েছে। কিন্তু কেন হয়েছে তা গবেষকরা বলতে পারবে। তবে আপাতত কৃষকদের পরামশ্য দিয়েছি তারা যেন জমিতে সেচ দিয়ে কিছুদিন অপেক্ষা করে। তাতে ফসলের উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে।
এবিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. মোমিনুর রশীদ সকল ইট ভাটা অবৈধ স্বিকার করে বলেন, আমাদের নিয়মিত অভিযান চলছে। ইতিমধ্যে এক কোটি টাকার মতো জরিমানা করা আদায় করা হয়েছে। এছাড়া ওই ক্ষতিগ্রস্থ ধান ক্ষেতের বিষয়ে বলেন, কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট থেকে গবেষকদের এনে পরীক্ষা করা হবে আসলে কি কারণে ধানের ক্ষতি হয়েছে।