মো.রুহুল আমিন,ধামরাইঃ ঢাকার ধামরাইয়ে ফসলি জমির মাটি কাটার ধুম পড়েছে। অসাধু মাটি ব্যবসায়ীরা মাটি কেটে ইটের ভাটায় বিক্রি করছে। দু’ফসলি, তিন ফসলি কোন জমিই বাদ পড়ছে না।এ যেন মাটি কাটির মহাউৎসব।মাটি কাটার ফলে ভেঙে পড়ছে রাস্তাঘাট।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার ১৬ টি ইউনিয়নে প্রায় ১শতটি জায়গায় মাটির লিক রয়েছে। কেউ নগদ টাকা দিয়ে জমি কিনে বছরের পর বছর মাটির ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।কেউ আবার রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে এই ব্যবসা করছে।বাদ পড়ছে না স্কুল, শ্বশান, ফসলি জমির মাটি। সব কেটে বিক্রি করছে ইটের ভাটায়। কেউ কিছুই বলার ও করার রাখে না।জমি কিনে মাটি কাটতে গিয়ে মাটি ব্যবসায়ীরা সরকারি খাস জমিও কেটে বিক্রি করছে ইটের ভাটায়।কেউ বাধা দিতে পারছে না।কেউ বললেই জমির মাটি টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছি বলে শেষ করছে ধামরাইয়ের তিন ফসলি জমি।
পাশের জমির মাটি কেটে নেওয়ার পর সাথে থাকা জমি একাই ভেঙে পড়ে। বাধ্য হয়ে কৃষকরা তাদের জমির মাটি বিক্রি করছে।বাধা দিয়েও কোন লাভ হচ্ছে না। যদি মাটি বিক্রি না করে তাহলে জোর পূর্বক জমির মাটি কাটা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একাধিক ব্যক্তি এ বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছে।আবার অনেকে অভিযোগ দিতে এসে ফিরে যাচ্ছে। কারণ ভূমি খেকুরা জমির মাটি কাটবেই। থামানো যাচ্ছে না ভ’মি খেকুদের দৌরাত্ব। কেউ কেউ বলছে অভিযোগ দিয়ে আর লাভ ডশ,অভিযোগের ভিত্তিতে কোন কাজ হয় না। বাধ্য হয়ে আমাদেও জমিগুলোও মাটি খেকুদের কাছে বিক্রি করতে হবে।দু’ফসলি তিন ফসলি জমি আর থাকবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কৃষক বলেন, জমি না দিয়ে কোন লাভ নেই।আশ পাশের মাটি কেটে ফেলা হচ্ছে। আমাদের জমি এমনিই নষ্ট হয়ে যাবে।বাধ্য হয়ে জমির মাটি বিক্রি করতে হচ্ছে। অপরদিকে, যদি পাঁচ ফুট কাটার কথা থাকে ভেকু দিয়ে ৮/১০ ফুট কেটে নেয়।কিছুই বলার নেই।বাধা দিলে মামলা হামলার ভয় দেখায়।
গাওতারা এলাকার জমির হোসেন বলেন, আগামী পাঁচ বছর পরে ধামরাইতে চাষের কোন জমি থাকবে না। প্রতিদিন যেখানে ২ শত এর বেশি ইটের ভাটায় মাটি যায় সেখানে আর কি থাকে।
শুধু তাই নয় ইটের ভাটার মাটির ট্রাক রাস্তা দিয়ে চলাচল করার কারণে রাস্তা ভেঙে যাচ্ছে। দশ বছর রাস্তার টেকসই থাকলে এখন তা দুই বছরের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে।বয়স্ত লোকজন নিয়ে রাস্তা দিয়ে চলাচল করা আে রক বিপদ জনক অবস্থায় পরিনত হয়েছে।অসুস্থ্য রোগী নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পথে রাস্তার বেহাল দশার কারণে রোগী আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এ সাধারণ লোকজনের অবস্থা নাকাল।মাটির ট্রাক রাস্থা দিয়ে চলাচল করার কারণে শুধু আজ্ঞলিক রাস্তাই নয় ,বিপদজনক অবস্থায় পরিনত হচ্ছে মহাসড়কও।
ফসলি জমির মাট কাটার কারণে দ্রুত জমির শ্রেণি পরিবর্তন হচ্ছে। হাজার হাজার পুকুরের মত সৃষ্টি হয়ে গেছে। যে জমিতে সারা বছরের ধান জন্মাত তা এখন আর চাষ করা যাচ্ছে না।অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে চাষের।ডুবা,পুকুর তৈরি হওয়ার কারণে ফসলি জমিতে আর কোন ফসল চাষ করা যাচ্ছে না।
একাধিক ব্যক্তির দাবি, প্রশাসনের নাকের ডগায় এই সব কাজ করে যাচ্ছে মাটি খেকুরা।মানছে না কোন বাঁধা। যদি রেকর্ডীয় জমিই নয়, সুযোগ মতো সরকারি সম্পত্তিই নাম মাত্র টাকায় দখলদার এর কাছ থেকে জমি কিনে মাটি বিক্রি করছে আর তা যাচ্ছে ইটের ভাটায়।এক দিকে থাকছে না ফসলি জমি অপরদিকে ইটের ভাটার কারণে পুরো ধামরাই উপজেলায় বসবাস করার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। অবৈধভাবে গড়ে উঠা এসব ইটের ভাটা বসতভিটার সাথে এসে পড়েছে। ইট পুরানোর সময় কালো ধোয়ায় ছেয়ে যায় পুরো এলাকা। এতে হাচি,শ^াসকষ্ট,হাপানি কাশিসহ নানা রোগ ব্যধিতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।
বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বলছেন, ভাটার কালো ধোয়া শিশুর জন্য বেশি ক্ষতিকর। তাছাড়া যাদের হাপানি,শাসকষ্ট রোগ রয়েছে তাদের জন্য আরো ভয়ঙ্কর।
স্থানীয় বাসিন্দারা মাটিকাটা নিয়ে একাধিকবার বাধা দিলেও অসাধু মাটি ব্যবসায়ীরা মানছে তাদেও কথা। উল্টো তাদেরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে থাকে। মামলা করার ও হুমকি দেয়।
আমরাই উপজেলায় এমন কোন এলাকা নাই যেখানে মাটি খেকুদের পদচারণ হয় নি।প্রভাবশালী ইট ভাটার মালিকরা এসব মাটি নিয়ে তৈরি করছে ইট। প্রায় ২শতটি ইট ভাটায় এসব মাটি সরবরাহ করছে মাটি ব্যবসায়ীরা।
ডনয়ম না মেনে ইট ভাটা তৈরি করছে ভাটার মালিকরা। সাধারণ মানুষের ঘরের উঠান পর্যন্ত চলে গেছে ইট ভাটা। শুধু মহাসড়ক বা আঞ্চলিক সড়কের পাশেই নয়,শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাড় গেছেও এসব ভাটা তৈরি করা হয়েছে।আইনের তোয়াক্কা না করে তৈরি করা হয়েছে এসব ভাটা।
এসব ভাটায় ইট তৈরি করার জন্য সরবরাহ করা হচ্ছে দু’ফসলি তিন ফসলি জমির মাটি। থাকছে না কোন আবাদি জমি। জমির মাটি কাটার ফলে জমিতে বড় আকারের পুকুরের সুষ্টি হয়ে যাচ্ছে। চাষের যোগ্য জমি হারাচ্ছে কৃষক।মানছে না কনো বাধা । থানায় অভিযোগ দিয়েও কোন ফল পাচ্ছে না সাধারণ জনগন।মাটির ট্রাক চলাচলের কারণে ২০ বছরের টেকসই রাস্তা যেন ২ বছরের মাথাই ধসে পড়ছে।পরিবর্তন হচ্ছে জমির শ্রেণি।
সচেতন মহলের দাবি যদি প্রশাসন কঠোরভাবে হস্তক্ষেপ করে তাহলে মাটি কাটা বন্ধ হয়ে যাবে। তাদেও নাকের ডগার উপর দিয়ে চলছে এ ব্যবসা।অনেকে মনে করেন, প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এ মাটি কাটার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।অপরদিকে,রাজনৈকি পরিচয়ও অনেকে বহণ করছে।
মাটি কেটে জমির শ্রেণি পরিবর্থন করতে চাইলে ডিসির অনুমতি লাগে। তার কোন তোয়াক্কা করছে না। নিজের স্বাধীন মতো ব্যবসা করে যাচ্ছে।